যে সময়টাকে সব সময় ভয় পেয়েছিলাম

আজ আমার জন্মদিন। পঁচিশ হলো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই একরাশ কান্না গলার কাছে এসে আটকে ছিল। আমি বাড়ি থেকে অনেক দূরে, বন্ধুদের থেকে অনেক দূরে। এখানে কেউ হয়তো জানেও না যে আমার জন্মদিন। সকালবেলা মা ফোন করেছিল, শুভ জন্মদিন বলার জন্য, আর আমিও প্রতুত্তরে রোবটের মত বলে দিলাম "ধন্যবাদ"! মা বললো, "মা কে কোনো দিন শুকনো ধন্যবাদ দিতে হয়?" আমি বুঝে উঠতে পারলাম না, তাহলে কি বলতে হয়! আমি কি সত্যিই এই মরা শহরে থেকে থেকে , রোবট হয় যাচ্ছি? মা কে ধন্যবাদ কেনো বললাম!! মা ও আর বেশি কথা বলল না, "আচ্ছা ভালো থাকিস", বলে ফোনটা কেটে দিল। কিন্তু... আমি তো ভালো নেই মা! এই শহরে নিজের ভাষাটাও মুখ ফুটে বলতে পারি না, এখানে কেউ বন্ধু হয়না, সবাই কলিগ হয়! এখানে কেউ শনি রবিবার গিটার সিগারেট নিয়ে আড্ডা বসায় না, সবাই ক্লাব বা পাবে যায়! আমি চেষ্টা করেও পারিনি এসব। ... এক মাস হলো... প্রেমিকা ও আর সাথে নেই। সময় দিতে পারিনা ওকে... এটা ছিল ওর মুখ্য কারণ। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, নিজের সব দোষ স্বীকার করেছি, তাও কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু আজ যখন দেখি, সে ঘুরছে, আনন্দ করছে, মনে হয় আমি কেনো পারিনা! কেনো পারিনা নিজেকে প্রাধান্য দিতে? ভেবেছিলাম আজ একবার ও ফোন করে জন্মদিন এর উইশ করবে! কিন্তু ও করেনি, আমার ভাবতেই অবাক লাগে, এই জীবন কত চকিত চমক দেয়!! দুই মাস আগে যার সাথে প্ল্যান করছিলাম কবে বিয়ে করব, কিরকম বাড়ি বানাবো! আজ তাকে ফোন করলেই আমাকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হয়।

এসব কথা নিজেকে বলতে বলতে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না, নিজের জন্মদিনে, প্রেমে প্রথম আঘাত খাওয়া একটা 16 বছরের ছেলের মত হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললাম! কিন্তু আমি তো 25?

আমি এই সময়টাকেই সব থেকে ভয় পেয়েছিলাম ছোটবেলা থেকে, যখন আমার পাশে আর কেউ থাকবে না, নিজের জন্মদিন টাকেও খুব দুর্বিষহ মনে হবে!

হয়তো এভাবেই কষ্ট পেতে পেতে , সব মনে রাখতে রাখতে একদিন এমন একটা সুন্দর সকাল আসবে যেদিন আমি বুঝতেও পারবো না, আমি আগের সারাদিন এসব নিয়ে একটুও ভাবিনি।

হয়তো...

যাই, অনেক দেরি হয়ে গেলো, অফিস যেতে হবে। সকালে একটা মিটিং আছে।